Popular NewsRecent Newsইসলামধর্ম

ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া ও উপায় | কুরআন ও হাদিসের আলোকে

ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া ও উপায়

ভূমিকা

মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক সংকট ও চাহিদার কারণে অনেক সময় ঋণ নেওয়া অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। তবে ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে ঋণ নেওয়া যেন শেষ বিকল্প হয় এবং ঋণ হলে তা সময়মতো পরিশোধ করা অপরিহার্য। ঋণ শুধু দুনিয়াতে বোঝা নয়, বরং আখিরাতেও এর হিসাব দিতে হবে। তাই একজন মুসলমানের কর্তব্য হলো ঋণমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করা, আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এবং বৈধ উপার্জনের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করা। কুরআন ও হাদিসে ঋণ থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ দোয়া ও আমলের উল্লেখ রয়েছে।

ইসলামে ঋণের গুরুত্ব ও সতর্কতা

রাসূলুল্লাহ ﷺ ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন—
“ঋণ নিয়ে পরিশোধের ইচ্ছা যার থাকে, আল্লাহ তার পক্ষে পরিশোধ সহজ করে দেন। আর যার ঋণ পরিশোধের ইচ্ছা থাকে না, সে আল্লাহর কাছে চোরের মর্যাদা পায়।”
(বুখারি ও মুসলিম)

এ থেকে বোঝা যায়, ঋণ করা বৈধ হলেও তা হালকা ব্যাপার নয়। মুসলমানের উচিত ঋণকে ভয় করা, এবং ঋণ হলে তা শোধের জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করা।

ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া

১. দুশ্চিন্তা ও ঋণ মুক্তির দোয়া

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ، وَقَهْرِ الرِّجَالِ

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের জুলুম থেকে।
(বুখারি ও মুসলিম)

২. হালাল রিজিক প্রার্থনার দোয়া

اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি তোমার হালাল রিজিক দ্বারা আমাকে হারাম থেকে বাঁচাও, আর তোমার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে সবার মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে মুক্ত করো।
(তিরমিজি, হাসান হাদিস)

৩. কুরআনের দোয়া

حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ

অর্থ: আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।
(সূরা আলে ইমরান: ১৭৩)

ঋণ মুক্তির ইসলামিক উপায়

  • হালাল উপার্জন: ঋণ শোধ করার জন্য হালাল রিজিক অর্জন করা জরুরি। হারাম উপার্জন দিয়ে ঋণ শোধ করলে বরকত থাকে না।
  • সময়সূচি মেনে ঋণ পরিশোধ: ইসলাম ঋণ পরিশোধকে আমানত হিসেবে দেখেছে। যিনি ঋণ শোধ করেন না, তার ইবাদতও পূর্ণাঙ্গ হয় না।
  • নিয়মিত নামাজ কায়েম: নামাজ মানুষের দুশ্চিন্তা দূর করে এবং রিজিকের দরজা খুলে দেয়।
  • জিকির ও দোয়া: প্রতিদিন সকালে-সন্ধ্যায় এবং নামাজ শেষে দোয়াগুলো পড়লে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।
  • অপচয় থেকে বিরত থাকা: আয় অনুযায়ী খরচ করা এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে দূরে থাকা ঋণ মুক্তির গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

উপসংহার

ঋণ মানুষের জীবনে এক ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। তবে একজন মুসলমান কখনো হতাশ হয় না, কারণ সে জানে আল্লাহই সকল সমস্যার সমাধানকারী। কুরআন ও হাদিসে উল্লেখিত দোয়াগুলো পড়া, নিয়মিত নামাজ কায়েম করা, হালাল উপার্জনে চেষ্টা করা এবং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল রাখা— এগুলোই ঋণ থেকে মুক্তির মূল চাবিকাঠি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ঋণমুক্ত করে তাঁর হালাল রিজিকের মাধ্যমে জীবন কাটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *